শৈবালের জনন (Reproduction of Algae): শৈবালে তিন ধরনের জনন পদ্ধতি সংঘটিত হতে দেখা যায়- অঙ্গজ, অযৌন এবং যৌন ।
১.অঙ্গজ জনন (Vegetative Reproduction): স্পোর (spore) অথবা গ্যামেট (gamete) সৃষ্টি ব্যতিরেকে যে প্রক্রিয়ায় জীবের দেহাংশ থেকে নতুন জীব সৃষ্টি হয় তাকে অঙ্গজ জনন বলে। শৈবালে নিম্নলিখিত বিভিন্ন উপায়ে এটি সংঘটিত হয়।
• কোষ বিভাজনের মাধ্যমে (By Cell Division) : এককোষী শৈবালে সাধারণত কোষ বিভাজনের মাধ্যমে জননক্রিয়া সম্পন্ন হয়। মাতৃকোষের বিভাজনের মাধ্যমে যে অপত্য কোষদুটি সৃষ্টি হয় সেগুলোই বৃদ্ধি পেয়ে নতুন উদ্ভিদে পরিণত হতে পারে। উদাহরণ-Euglena, Diatom ইত্যাদি ।
• খন্ডায়নের মাধ্যমে (By Fragmentation) : অশাখ সূত্রবৎ শৈবাল এবং কলোনীবাসী শৈবালের দেহ দুই বা ততোধিক খণ্ডে বিভক্ত হলে প্রতিটি খণ্ড স্বাধীন উদ্ভিদে পরিণত হয়, যথা- Ulothrix, Oedogonium
• হর্মোগনিয়াম-এর মাধ্যমে (By Hormogonium) : (Myxophyceae শৈবালের ট্রাইকোম দুই বা ততোধিক খণ্ডে বিভক্ত হয়ে প্রতিটি খণ্ড এক একটি হর্মোগনিয়াম উৎপন্ন করে । প্রত্যেক হর্মোগনিয়াম নতুন উদ্ভিদে পরিণত হয় । উদাহরণ-Oscillatoria, Nostoc, Westiella ইত্যাদি (প্রতিকূল পরিবেশে হর্মোগোনিয়াম পুরু প্রাচীর দ্বারা আবৃত হলে তাকে হর্মোসিস্ট বলে )।
• টিউবার-এর মাধ্যমে (By Tuber) : কোনো কোনো উদ্ভিদের রাইজয়েড অঞ্চলে টিউবার নামক অঙ্গের সৃষ্টি হয়। এসব টিউবার নতুন উদ্ভিদের জন্ম দেয়। উদাহরণ- Chara |
• মুকুল (Bud) : কোনো কোনো শৈবাল মুকুল সৃষ্টির মাধ্যমে নতুনভাবে পূর্ণাঙ্গ শৈবালদেহ সৃষ্টি করে। উদাহরণ-Protosiphon 1
২. অযৌন জনন (Asexual Reproduction):
বিভিন্ন ধরনের স্পোর বা রেণু সৃষ্টির মাধ্যমে যে জনন প্রক্রিয়া সাধিত হয় তাকে অযৌন জনন বলে। স্পোর হচ্ছে অযৌন জননের একক । যে বিশেষ ধরনের গঠনে বা থলিতে স্পোর উৎপন্ন হয় তাকে বলা হয় স্পোরাঞ্জিয়াম sporangium, বহুবচন sporangia)) (স্পোরাঞ্জিয়ামের মধ্যে স্পোর উৎপাদনের প্রক্রিয়াকে স্পোরুলেশন sporulation) বলে।) স্পোর সাধারণত হ্যাপ্লয়েড (n), তবে ডিপ্লয়েড (2n)ও হতে পারে। শৈবালের হ্যাপ্লয়েড থ্যালাস গঠন করে বংশ বৃদ্ধি ঘটায় স্পোর ফ্ল্যাজেলাযুক্ত ও সচল হলে তাকে ক্রুশোর (zoospore) মোর অঙ্কুরিত হয়ে বলে, যেমন- Ulothrix (বহুসংখ্যক ফ্ল্যাজেলাবিশিষ্ট একটি মাত্র জুস্পোর উৎপন্ন হলে তাকে সিনজুস্পোর বলে। ফ্ল্যাজেলাবিহীন নিশ্চল স্পোরকে বলা হয় অ্যাপ্লানোস্পোর। (aplanospore); যেমন-Microspora. প্রতিকূল পরিবেশেঅ্যাপ্লানোস্পোর পুরু প্রাচীরবেষ্টিত হলে তাকে হিপনোস্পোর বলে। যেমন-Chlamydomonas. মাতৃকোষের অনুরূপ বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন অচল স্পোরকে অটোস্পোর (autospore) বলে। যেমন- Chlorella। (কতক শৈবাল কোষের পুরো প্রোটোপ্লাস্ট খাদ্য সঞ্চয় করে এবং পুরু প্রাচীর বেষ্টিত হয়, তখন তাকে অ্যাকাইনিটি বলে। অনুকূল পরিবেশে অ্যাকাইনিটি অঙ্কুরিত হয়ে নতুন শৈবালে পরিণত হয়, যেমন- Pithophora, Cladophora (ডায়াটম জাতীয় শৈবালে বিশেষ ধরনের স্পোর সৃষ্টির মাধ্যমে সংখ্যাবৃদ্ধি ঘটে। এদেরকে অক্সোম্পোর বলে; যেমন-Navicula
৩. যৌন জনন (Sexual Reproduction):
দুটি বিপরীতধর্মী গ্যামেটের মিলনের ফলে যে জনন সম্পন্ন হয় তাকে যৌন জনন বলে। যৌন মিলনের গ্যামেট দুটির একটিকে পুংগ্যামেট এবং অপরটিকে স্ত্রীগ্যামেট বলে গ্যামেট যে বিশেষ জননাঙ্গে উৎপন্ন হয় তাকে গ্যামেট্যাঞ্জিয়াম (gametangium, বহুবচনে gametangia) বলে । গ্যামেটকে যৌন জননের একক হিসেবে আখ্যায়িত করা হয় । গ্যামেট হ্যাপ্লয়েড (n) প্রকৃতির। শৈবালের যৌন জননাঙ্গ প্রায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সরল ও এককোষী এবং তার বাইরে কোন বন্ধ্যা আবরণী থাকে না। নীলাভ-সবুজ শৈবাল ব্যতীত সব শৈবালে যৌন জনন সংঘটিত হয়। তবে, জানা গেছে নীলাভ-সবুজ শৈবালেও ব্যাকটেরিয়ার মতো জিনের পুন:সংযোজন ঘটে। শৈবালের যৌন জনন পদ্ধতি নিম্নে উল্লেখ করা হলোঃ
ক. আইসোগ্যামি (Isogamy) : আকার ও প্রকৃতিগতভাবে একই রকম দুটি গ্যামেটের মিলনকে আইসোগ্যামী বলে । এটি একটি সরল ও অনুন্নত পদ্ধতি । এরূপ যৌন জননে একটি গ্যামেটকে + (পুং) এবং অপরটিকে – (স্ত্রী) গ্যামেট বলা হয়। অনুন্নত শৈবালে এ প্রক্রিয়া বেশি দেখা যায়। যেমন- Chlamydomonas, Ulothrix, Spirogyra ইত্যাদি।
খ. অ্যানআইসোগ্যামি (Anisogamy) : (আকার ও প্রকৃতিগতভাবে ভিন্ন দুটি সচল গ্যামেটের মিলনকে অ্যানআইসোগ্যাসি বলে। এক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত ছোট ও অধিকতর সক্রিয় গ্যামেটকে পুংগ্যামেট এবং বড় গ্যামেটটিকে স্ত্রীগ্যামেট বলা হয়। যেমন-Caulerpa, Chamydomonas Panderina ইত্যাদি।
গ. উগ্যামি (Oogamy) : একটি ক্ষুদ্র ও সাধারণত সচল পুংগ্যামেটের (শুক্রাণুর) সাথে একটি বড় আকারের নিশ্চল স্ত্রীগ্যামেটর (ডিম্বাণুর মিলন প্রক্রিয়াকে উগ্যামি বলে। এক্ষেত্রে শুক্রাণু অ্যান্থেরিডিয়ামের মধ্যে এবং ডিম্বাণু উগোনিয়ামের মধ্যে উৎপন্ন হয়। উগ্ন্যামী সবচেয়ে উন্নত ধরনের যৌন জনন এবং উন্নত শৈবালে বেশি দেখা যায়। উদাহরণ-Volvox, Oedogonium, Chara, Polysiphonia, Fucus ইত্যাদি।
আরও দেখুন...